কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় ৪৫ তম জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপনের নামে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বেপরোয়া চাঁদাবাজির গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোদ সরকারী কর্মকর্তার এহেন চাঁদাবাজির ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, আজ ৫ নভেম্বর ৪৫ তম জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপনের পূর্বে গত এক সপ্তাহ ধরে পেকুয়া উপজেলার নিবন্ধিত প্রায় অর্ধ শতাধিক সমবায় সমিতির কাছ থেকে এক হাজার পাঁচশত টাকা শুরু করে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা উত্তোলন করেন উপজেলার বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত সমবায় কর্মকর্তা মো. ওসমান গণি। আর যে সব সমবায় সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারী উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার দাবীকৃত টাকা দিতে পারেনি তাদের সমবায় দিবসের অনুষ্টানে আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। অথচ সমবায় দিবস উদযাপনের জন্য সরকারীভাবে বরাদ্দ রয়েছে। চাঁদার টাকায় সরকারী দিবস উদযাপনের কোন ধরনের নিয়ম না থাকলেও দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ওসমান গণি দায়সারাভাবে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সমবায় দিবস পালন করেছেন। সমবায় দিবসের অনুষ্টানে স্থানীয় কোন গণমাধ্যম কর্মীকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে সংবাদকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে।
পেকুয়া উপজেলা সদরের একটি নিবন্ধিত সমবায় সমিতির এক নেতা অভিযোগ করেছেন, ৪৫ তম সমবায় দিবস উদযাপনের নামে তাদের সমিতির কাছ থেকে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ওসমান গণি ২ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছেন।
পেকুয়া সদরের মেহেরনামা গ্রামের একটি সমবায় সমিতির সভাপতি অভিযোগ করেছেন, তাদের সমিতির কাছ থেকেও সমবায় কর্মকর্তা ওসমান গণি চাঁদা নিয়েছেন।
মগনামা ইউনিয়নের বাইন্যা ঘোনা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি অভিযোগ করেছেন, তার সমিতির কাছ থেকে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ওসমান গণি সমবায় দিবস উদযাপনের নামে তিন হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেছিল। চাঁদার টাকা দিতে অপরাগ হলে তাদের সমিতিকে সমবায় দিবসের অনুষ্টানে আমন্ত্রণ পর্যন্ত করা হয়না ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার অর্ধ শতাধিক সমবায় সমিতির কাছ থেকে গড়ে কমপক্ষে দুই হাজার টাকা হিসেবে সর্বমোর্ট এক লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ওসমান গণি।
জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওই বিতর্কিত উপজেলা সমবায় অফিসকে নানান অনিয়ম ও দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ইতিপূর্বেও পেকুয়ায় প্রায় তিন বছরের বেশি কর্মরত ছিলেন ওসমান গণি। এরপর অনত্র বদলী হন ওসমান গণি। কিন্তু গত এক বছর পুর্বে আবারো মোটা অংকে সমবায় অধিদপ্তরের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ফের পেকুয়া উপজেলা সমবায় কার্যালয়ে যোগদান করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, পেকুয়ায় যোগদান করেই শুরু করেন নানান অনিয়ম ও দূর্নীতি। বিভিন্ন সমবায় সমিতির নির্বাচনে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে ওই বিতর্কিত সমবায় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রতিদিন সরকারী কার্য দিবসে পেকুয়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ওসমান গণি সরকারী নির্ধারিত সময়ে অফিসেও আসেননা। আর তার বিরুদ্ধে কর্মস্থল ফাঁকির অভিযোগও রয়েছে। তার কর্মস্থল পেকুয়া উপজেলা সমবায় অফিসে হলেও ভাড়া বাসা নিয়ে বাস করেন জেলা শহরে। নিজের ইচ্ছে মাফিক সরকারী কার্য দিবসে সকাল ১১টার পর অথবা দুপুর ১টার পরেই অফিসে আসেন ওই সমবায় কর্মকর্তা ওসমান গণি।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে শুক্রবার বিকাল (৩ টা ৪৯ মিনিটে) পেকুয়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ওসমান গণিকে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে ফোন করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই তার বক্তব্য দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে এ ব্যাপারে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) বিকাল (৩টা ৪০ মিনিটে) কক্সবাজার জেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. আবদুল লতিফকে মুঠোফোনে অবহিত করা হলে তিনি এ প্রতিবেদকে জানান, সমবায় দিবস উদযাপনের জন্য কোন ধরনের চাঁদাবাজির নিয়ম নাই। তিনি পেকুয়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
পাঠকের মতামত: